পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আজো কি শুনিনি


আজও কি শুনিনি সেই মায়াকান্না,
কেউ কি আজও অনুভব করিনি সেই চিরচেনা ব্যাথা ??


আর কত রবো নিরবে,
রক্তে কি আমার জুম্ম জাতীয়তাবাদ না রবে ?


আর কত দিন সইবে অনাচার, অত্যাচার, আর কত হারাবে জমি ।
আজও কি তেষ্টা মিটে না, আর কত রক্ত চাও তুমি ?


হে স্বঘোষিত নির্ধারক, আজও কি শুননি সেই মায়াকান্না !
কত আর ঝড়াবে নিজেদের রক্ত, কবে বুঝবে কোথায় সেই চিন চিনে ব্যাথা ?


আজও তারা ভুলেনি এম এন লারমা তাদের রক্তে,
আজও জ্বলে তাদের বুক, আজও ভুলেনি তারা লড়তে।


জেনো আজও অভাগারা বুনে চলেছে স্বপ্ন,
তোমাদের দিকেই তাকিয়ে সবাই কোরো না যেন তাদের আসা ভঙ্গ 

কি হবে জেনে


কি হবে জেনে আজ কেমন আছি,
কি হবে জানিয়ে ভালবাসি !

তুমি হয়তো আছো আজো সেই তুমি,
আমি যে পারিনি থাকতে সেই তোমার চেনা আমি ।

জানি তুমি ছিলে, আজো আছো, মনের কোনো এক গোপন ঠিকানায়,
তবু দিন বদলায়, বদলেছি আমি সময়ের তরে কোনো এক অজানায় ।

সহস্র দিন পর পিছু ফিরে যদি ডাকো আমায়,
বুকচাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিই বা দেবো তোমায় !!

তুমি পারোনি, পারোনি তুমি যেমন চেয়েছিলে রাখিতে আমায়,
তাইতো বদলেছি আমি, বদলিয়েছে সময় আমায় ।

হঠাৎ চলেগিয়েছিলে, কেনই বা আবার ফিরে এলে !
কিসের আশায় এসেছো, কেনইবা গিয়েছিলে ?

জানি, তুমি কষ্ট পাবে এখন, যেমন আমায় দিয়েছিলে,
তবু ...
ক্ষমা কোরো আমায়, পারিনি হতে তখন তুমি যেমন চেয়েছিলে ...

সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

তুমি ছিলে



তুমি ছিলে আমার মনজুড়ে ,
ছিলে কবিতার কাব্য হয়ে ।

তুমি ছিলে আমার প্রতিটি মূহুর্তে,
ছিলে প্রতিটি ক্ষণে ।

ছিলো কত উচ্ছাস, কত কল্পনা তোমাকে নিয়ে ।

ছিলে আমার সুখে-দুখে, ছিলে আমার প্রেরণায়,
খুজি আমি তোমায়, খুজি সারাবেলা, হারালে তুমি কোথায় !!

তুমি ছিলে, তুমি আছো, তুমি রবে ,
আমার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস হয়ে ।

রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

কাঙ্গালের প্রলাপ

ইসলাম হোলো রাষ্ট্র ধর্ম, বলবে সবাই বিসমিল্লাহ !!!
মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সবাই কি একই দাড়িপাল্লা ??
বাংলাদেশি থেকে জাতীয়তা নাকি বাঙ্গাল,
ধর্ম নেই, জাত নেই মোরা কেন রাষ্ট্র কাঙ্গাল ??
আমি আদিবাসি তাতে আন্তর্জাতিক নেই কোনো বিভ্রান্তি,
তবে মোরে কেন বইতে হবে উপজাতি উপেক্ষাণটি ??
শান্তির আশায় হয়লো চুক্তি শান্তি, যার কল্যণে ! পাহাড়ে এখন ঘোর অশান্তি,
আহা কি সুখ, বাস্তবায়ন ছারা করিয়া চুক্তি পেলে পুরষ্কার ইউনেস্কো শান্তি ।
না বিএনপি না আওয়ামিলীগ তোরা সবাই ক্ষমতা লোভি,
সংখ্যালঘুদের দমিয়ে রাখতে কয়েকদিন পর কি মানবখেকো হবি ??
বাপের স্বপ্ন পূরণ করিল কণ্যা,
আহা কি সুনাম !! Daughter Of Peace, গণতন্ত্রের মানসকণ্যা ।
ভাবি, তাহাদের কান্ডকারখানা দেখিয়া কি গণতন্ত্র খুজে মুখ লুকাইবার কচু পাতা ??
ওরে রবিন্দ্রনাথ, তোর সোনার বাংলার মাথায় যে বসিল ব্যাঙের ছাতা ।

জন্মই কি আমার আজন্ম পাপ

আমি বাংলাদেশি, বাংলাদেশে জন্মে আমিও অন্য সবার মতই গর্বিত । বাংলাদেশের পার্বত্য আঞ্চলের খুদ্র এক জাতিতে আমার জন্ম । জন্মের পর থেকেই জেনেছি আমরা লড়াকু, কি ভাষা, কি স্বাধীনতা, লড়াই করেই তো আদায় করা । ভাবি, তখন কি ছিলো জাতি বিভেদ, ছিলো কি ধর্মের বিভেদ !! প্রশ্ন জাগে মনে, তবে কেন হবে আমার জাতীয় পরিচয় বাঙ্গালি, আমরা বাংলাদেশি হয়েও কেন খুদ্র জাতিগুলো নির্যাতিত, নিপিরিত, শোষিত, বঞ্চিত !


যে জাতি ভাষার জন্য লড়াই করতে জানে সে জাতি কি অন্য ভাষাগুলোকে এভাবে বিলিন হতে দিতে পারে ? যে জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো বঙ্গমাতার সম্ভ্রম হারানোর শোকে কাতর সে কিভাবে পারে অন্য জাতির নারীর সম্ভ্রম হরন করতে ! যে জাতি ভিতে মাটির জন্য লড়াই করতে জানে সে জাতি কিভাবে পারে অন্য খুদ্র জাতির ভিতে মাটি দখল করতে !! অনেকেই প্রশ্ন করেন, সে কেন আমার জাতির মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না, উত্তর কি হবে বলুন ………! উত্তর কি এই নয়, যে জাতির সব নেতারা আমাদের করেছেন বাস্তুহারা, অধিকারহীন, কতটুকু সন্মান সে আমার জাতি মা-বোনকে দিয়েছে, দিচ্ছে ? সে জাতিকে আমি কতটুকু বিশ্বাস করতে পারি ?






অন্যকে আর কতো দোষারোপ করবো, নিজেকেই মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি, যে জাতিতে এম এন লারমার জন্ম, যে জাতির রক্তে এম এন লারমার রক্ত প্রবাহমান, সে জাতি কেন আজ অন্য পথের পথিক, কেন সে হারালো একতা !! তিনি তো আমাদের বিভেদ করতে শেখাননি, শিখিয়েছেন লড়াই করতে, শিখিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে । তবে …… ! আমি জানিনা, জুম্ম শব্দটিতে কেন এলার্জি !!! চাক্‌মা শব্দ বলে ? কেউ কেউ বলেন, সে দিন নেই আর, রাতুয়া আয়বো, কুরো কাটি দিবো, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর ... ছাত্র বের হয়, নতুন একটা রাজনৈতিক দল করবো !! আমরা শিক্ষিত, মূর্খতো নয় , তবে কেন ভুলে গেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে ?? নিজের কি বুঝার জ্ঞ্যান নেয় , নাকি খুদ্র এই জাতিতে জন্মই আমার আজন্ম পাপ ???

শিক্ষিত তরুণরাই বদলে দিতে পারে পাহাড়ের ঘৃণ্য রাজনীতি


বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৯০ এর এরশাদ সরকার বিরোধী ছাত্র-গণ অভ্যূত্থানে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। গত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও  আমরা দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অন্যায় সেনা শাসন, সেনাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার মেনে নেয়নি ।
ইতিহাস বলছে, আমাদের পাহাড়ীদের উপর চলমান অন্যায়, নিপীড়ন, অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল লড়াকু ছাত্র সমাজ– প্রথমে  পাহাড়ী ছাত্র সমিতি, আরো পরে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, সংক্ষেপে পিসিপি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তিকে ঘিরে বিভক্ত হয় পিসিপি। শান্তিচুক্তি পক্ষীয় জনসংহতি সমিতি–জেএসএস সমর্থিত পিসিপি এবং শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট– ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি।
এখন পিসিপি’র নিজস্ব ভিত্তি নেই বললেই চলে, কারণ যে নামেই ডাকা হোক না কেন, অথবা পিসিপি যে আঞ্চলিক দলের সঙ্গেই যুক্ত হোক না কেন, সংগঠন হিসেবে  পিসিপি’র দুই অংশই এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তাদের কথা না হয় বাদই দেওয়া যাক। কারণ যারা অসুস্হ্ রাজনীতির চর্চা করছেন, তাদেরকে বলে কোন লাভ নেই, তারা আসলে নিজ নিজ নেতাদের শেখানো বুলি ছাড়া অন্য কোন চেতনা ধারণ করে বলে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় । আমার মনে হয়, তারা জুম্ম (পাহাড়ি) জাতির জন্য কাজ করতে ভুলে গেছে; দলের কাজেই তারা বেশী ব্যস্ত ।
পিসিপি’র বাইরে যারা সাধারণ শিক্ষার্থী, তাদের বলছি,  আপনারা একটু ভেবে দেখুন, শান্তিচুক্তি হওয়ার পর এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেল, যার মূল বিষয়গুলো এখনো অবাস্তবায়িত, পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো স্বাধীন দেশের ভেতর পরাধীন এক জনপদ, সেনাশাসিত অঞ্চল, ভাতৃঘাতি সংঘাতের সাথে সাথে পাহাড়ে চলছে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটেলার বাঙলী কর্তৃক পাহাড়ীদের জমি জবর দখল, অগ্নি সংযোগসহ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যতন-নিপীড়ন। কিছু দিন বিরতির পর আবার এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায়।
এ কথা ধারণা করা কঠিন নয় যে, যতদিন শান্তিচুক্তি পুরোপুরি না বাস্তবায়িত হবে, ততদিন এ সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি  হয়েই চলবে। … কেউ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারেন না যে, একদিন আমার ওপর বা আমার বাবা-মা, ভাই-বোনদের ওপর আবারো হামলা হবে না ।
এ রকম এক দমবদ্ধ করা পার্বত্য পরিস্থিতিতে আমরা কী শুধুই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবো? দেখুন, রাজনৈ্তিক দলগুলোর অনৈ্তিক কাজের জন্যই চাকমারা আজ অন্য জাতিস্বত্ত্বার কাছে অপ্রিয়; তাই বলা যায়, লক্ষ্য আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার আদায় হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের দশ ভাষাভাষী এগারোটি জাতি আজ আমরা বিভক্ত। উপরন্তু রয়েছে আমাদের তিনটি রাজনৈ্তিক দল–জেএসএস (সন্তু), ইউপিডিএফ এবং জেএসএস (রূপায়ন); রয়েছে আওয়ামী লীগ ও  বিএনপি’র সমর্থক পাহাড়ীরা। তাহলে বলুন তো আমরা কয় ভাগে আজ বিভক্ত?
আপনারা কী জানেন, এমনও তথ্য আছে, সরকার কোন ভাল, শিক্ষিত বাঙলি জনগোষ্ঠিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূণর্বাসন করেনি?  তাদের মধ্যে অনেকেই সন্ত্রাসী, পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামিও রয়েছে। এমন কি তারাও প্রতারণার  শিকার, তাদেরকে বলা হয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামে জায়গার অভাব নেই, পাঁচ একর করে জায়গা দেওয়া হবে তাদের। সে প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় তাদের প্রতি মাসে রেশন দেওয়া হয়, অথচ পাহাড়ীরা বৃদ্ধ ভাতা থেকেও বঞ্চিত ।
আরো লক্ষণীয়, সংবাদ মাধ্যমগুলো একতরফা খবর প্রকাশ করার কারণে আদিবাসী জনপদের ওপরেও সরকারের কুনজর পড়েছে। খাগড়াছড়ীতে এক বছরেরও বেশী সময় ধরে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ বন্ধ । ভাবুন কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে এর পিছনে?
অন্যদিকে তিনটি রাজনৈতিক দলের কোন একটিতে যোগ দিলেও স্বজাতির ভাইয়ের হাতেই হয়তো মরতে হবে।
এ অবস্থায় একমাত্র শিক্ষিত তরুণরাই বদলে দিতে পারে আমাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ঘৃণ্য রাজনীতি এবং ধ্বংসের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে । তাই আহ্বান জানাই, সুশীল ছাত্র সমাজ, আসুন, আমাদের রাজনৈ্তিক দলগুলোর অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন না করে আমরা একতাবদ্ধ হই। সরকারের চক্রান্তের হাত থেকে জুম্ম জাতিকে রক্ষা করতে চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জোর আন্দোলন গড়ে তুলি।

হতাশা বাড়ছে দিন দিন, হারিয়ে যাচ্ছে জাতির জন্য কিছু করার একাগ্রতা


আমি এতদিন আমার প্রতিটি লেখার শেষে লিখতাম, যাই লিখেছি তা আমার ব্যক্তিগত অভিমত, অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। সংযত কারণে এই লেখাটিই আগেভাগেই লিখছি… হয়তো জাতির বিবেকের কাছে এটিই আমার শেষ লেখা।
আমার লেখনি প্রতিভা খুব নগন্য কি না আমার জানা নেই, জানি না আমার লেখাগুলো জাতির বিবেকের কাছে আবেদনময়ী কি না; তবে এটি জানি, আমি  তেমন নামি-দামি কোনো লেখক নই, সখের বশে লিখি, জুম্ম (পাহাড়ি) জাতির দুর্দশা দেখে নিজের বিবেকের দংশনে লেখি ।
কিছুক্ষণ আগে চাকমা ভাষায় প্রচলিত একটা কথা খুব মনে পড়ছিল:
হানা হুমদ পানি ঢালিনেই হোনো লাভ নেই। অর্থাৎ  ফুটো কলসিতে পানি ঢেলে কোনো লাভ নেই।
কারণ আমার সামান্য অভিজ্ঞতা, ভাষা জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি দিয়ে লেখা কলামগুলোর কোনো মূল্য দেখি না। জাতিগত নানা সমস্যা নিয়ে লেখার পরেও দেখি, সবকিছু আগে যেমন চলছিলো তেমনই চলছে, কোনো পরিবর্তন নেই। তাই মনে হয়, আমার লেখাগুলোতে হয়তো নেই কোনো প্রতিভার ছাপ; নয়তো ফুটে ওঠে না তেমন আবেদন। অথবা ‌”হানা হুমদ পানি ঢালা না” তিনটির  যে কোনো একটিকে এর কারণ হিসেবে ধরে নিয়েছি।
তবে হ্যাঁ, আমি ভাগ্যবান। কারণ আমি অনেক বন্ধু পেয়েছি, তাদের স্বজাতির জন্য কিছু করার দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে। তাদের একজনের কথা উল্লেখ না করে পারছি না– তার নাম প্রিতম চাকমা (প্রীক), সে ReNewable energy Management (Hydropower,Solar, Bio Fuel) Principle of Power System­ ­ নিয়ে পড়াশুনা করছে । ­ ­তার স্বপ্ন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের অশ্রুজলের ওপর তৈরি কাপ্তাই বাঁধকে নিয়ে। সে স্বপ্ন দেখে, কাপ্তাই বাঁধে আরও উন্নত প্রযুক্তি সংযোজন করে সেখান থেকে উৎপন্ন জলবিদ্যুৎ দিয়ে পাহাড়িদের আবাসস্থল আলোকিত করা যাবে।
কাপ্তাই বাঁধের ওপর তার লেখা তথ্যসম্বৃদ্ধ, হয়তো তার লেখাটি আপনাদের অনেকের নজরে পড়েছে।  আমি সম্মান করি তার স্বপ্নকে, সম্মান করি তার ইচ্ছে শক্তিকে। যদিও তার স্বপ্নটিকে বাস্তবায়ন করা বোধহয় কঠিন ।
আমাদের আরো একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা–  জুম্ম সামাজিক যোগাযোগের একটি মাধ্যম তৈরি করা। হতাশা যতই বাড়ুক, কথা দিচ্ছি, একদিন তা আপনাদের সামনে হাজির করবোই।
এবার আমরা কেনো হতাশ, তার ব্যখ্যায় আসি।
একজন ফেসবুক বন্ধুর প্রোফাইল ছবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ– পিসিপি’র বর্ষপূর্তীর পোস্টার দেখে আমি তাতে মন্তব্য লিখেছিলাম:
অবিভক্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কাম্য।
তিনি উত্তর দিলেন: পিসিপি কবে বিভক্ত হলো ?
আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম,  পিসিপি (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রটিক ফ্রন্ট–ইউপিডিএফ), পিসিপি (জনসংহতি সমিতি– জেএসএস) এবং পিসিপি (জেএসএস-এমএন লারমা) এই তিনভাগে কী বিভক্ত নয় ?
উনি উত্তরে লিখলেন, পিসিপি তো পিসিপি-ই, বৃহত্তর নয়, ক্ষুদ্রও নয়, এমএন লারমাও নয়, সন্তু  লারমাও নয় । পিসিপি-র পরিচয় হচ্ছে  পিসিপি। কেউ যদি নিজের ইচ্ছেতে সংগঠন থেকে বের হয়ে আরেকটি সংগঠন গঠন করে, তখন তাকে ওই ধরনের ওই ধরণের নাম লেজ লাগিয়ে  ব্র্যাকেট বন্দী করে লিখতে হয়। পিসিপি-র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী  পিসিপি  এক এবং অভিন্ন ।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কী তাই?  তা যদি না হয়, তাহলে কবে বিভক্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ অবিভক্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে পরিনত হবে?
আমি বাহবা পাওয়ার জন্য লেখি না। কিন্তু এরপরেও আমার লেখা “শিক্ষিত তরুণরাই বদলে দিতে পারে আমাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ঘৃণ্য রাজনীতি” তে একজনের মন্তব্য পাওয়ার পর খানিকটা পীড়িত না পারিনি। এই ব্লগের লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করার পর একজন চাকমা ভাষায় লিখছেন, “আমার আগে ঐক্য দরকার। সেনেট্টেই ইককু মোনদি ফাগাফাগি গোরি হনো লাভ নেই।” অর্থাৎ আমাদের আগে ঐক্য দরকার। সে জন্য এখন ফাঁকা আওয়াজ করে লাভ নেই।
তাকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, আমার এই লেখাটি কি “ফাকাফাকি”? কোনো প্রতিউত্তর না পাওয়ায় ধরে নিলাম, হয়তো তাই।
কিছু দিন আগে ফেসবুক গ্রুপ CHT BD অথবা “পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice” এ  অথবা উভয় গ্রুপেই একটা পোস্ট দেখলাম। তাতে বলা হয়েছে:
কিছু জুম্ম নারী জুম্ম ছেলেদের বন্ধুত্বের অনুরোধ (friend request ) গ্রহণ করেন না (accept), ঝুলিয়ে (pending) রাখেন। অথচ তারা বাঙালি বা বাঙালি নামে কোনো জুম্মর বন্ধুত্বের অনুরোধ (friend request ) পাঠালে তা ঠিকই গ্রহণ করেন (accept)। তিনি নিজেও নাকি  বাঙালি নাম নিয়ে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়ে এমন ঘটনা দেখেছেন।
প্রতিহিংসার বসে নয়,  শুধুমাত্র বাস্তবতা তুলে ধরার জন্যই এই কথাটি লেখা (অনেক খুঁজেও পোস্টটি পেলাম না)।
আমরা যারা ফেসবুক ও ব্লগে যাই, তারা সকলেই লেখাপড়া জানি। সংযত কারণে এইসব শিক্ষিত পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন, লেখাপড়া শিখে আমরা অন্ধ বা দুর্জন হচ্ছি না তো? আমাদের কেনো প্রতিবাদের ভাষা নেই?  সরকার ও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিনিয়ত অগণতান্ত্রিক কাজ করে যাচ্ছে। কোনো আমারা তার প্রতিবাদ করছি না?
যুগ যুগ ধরে নিপীড়িত হয়েও আমরা আজ কেনো প্রতিবাদহীন? পাহাড়ে ভাতৃঘাতি  সংঘাতের পাশাপাশি সেখানে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়িদের জমি জবর দখল, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণসহ আরো নানা নিস্পেষণ। কিছুদিন বিরতির পর পর আবারো এ সব ঘটনা ঘটেই চলেছে।
এ কথা ধারণা করা কঠিন নয়,  যতদিন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হবে, ততদিন এসব অমানবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। … একদিন আমার উপর বা আমার বাবা-মা, ভাই-বোনদের উপর একই রকম হামলা যে হবে না, এ রকম নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।
এর পরেও কী আমরা শুধু নিরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করে যাবো? একদিন তো মরতেই হবে, তাহলে লড়াই করে কেনো মরবো না?
আবারো সেই বন্ধুটির প্রসঙ্গ। একদিন মাঝ রাতে হঠাৎ করে সে ফোন করে দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলে:
ভাই, বাংলাদেশে থেকে কোনো লাভ নেই! তুই যে লেখালেখি করিস, তাতেও কিছু হবে না। অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। কোনো ঐক্য নেই। নেই  জাতির জন্য জোর কোনো আন্দোলন। বন্ধ হচ্ছে না ভাতৃঘাতি সংঘাত। সবাই শুধু নিজের স্বার্থটাই ভাবে। জাতির কী হবে,  কী হচ্ছে — তা চিন্তা করে না। … তুই বরং ভারতে চলে আয়। এখানে অন্তত নিজের ভাইয়ের আঘাতে প্রাণ হারাবি না!
ভেবে দেখুন, কিছুদিন আগেও যে যুবক স্বপ্ন দেখতো কাপ্তাই বাঁধে উন্নত প্রযুক্তি সংযোজন করে আলোকিত করবে পাহাড়, আজ সে কেনো হতাশ?… 

আমাদের জীবন কচু পাতার পানি নয়…



পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের আগে ও পরে আমরা প্রতিনিয়ত কল্পনা চাকমার মতো কতো না প্রতিভাবান পাহাড়ি সন্তান হারিয়েই চলেছি। জাতি সমাজের ভাই-বোন হারানোর হাহাকার পাহাড় জুড়ে বিদ্যমান। …

কয়েকদিন আগেও হারালাম আশীষ চাকমাসহ নাম না জানা আরো অনেককে; আহত হলেন মিঙা প্রু, বিভাগীয় প্রকৌশলী জ্যোতি রঞ্জন চাকমাসহ অনেক অসহায় পাহড়ি মানুষ। কী দোষ ছিলো তাদের? তারা বিপদাগ্রস্থ ও  অসহায় পাহাড়ি– এটাই কী তাদের অপরাধ? আমরা ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বাগুলো গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের অধিকার দাবি করে আসছি; এটাই কী আমাদের অপোরাধ?
পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের আগে ও পরে আমরা প্রতিনিয়ত কল্পনা চাকমার মতো কতো না প্রতিভাবান পাহাড়ি সন্তান হারিয়েই চলেছি। জাতি সমাজের ভাই-বোন হারানোর হাহাকার পাহাড় জুড়ে বিদ্যমান। …

কয়েকদিন আগেও হারালাম আশীষ চাকমাসহ নাম না জানা আরো অনেককে; আহত হলেন মিঙা প্রু, বিভাগীয় প্রকৌশলী জ্যোতি রঞ্জন চাকমাসহ অনেক অসহায় পাহড়ি মানুষ। কী দোষ ছিলো তাদের? তারা বিপদাগ্রস্থ ও  অসহায় পাহাড়ি– এটাই কী তাদের অপরাধ? আমরা ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বাগুলো গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের অধিকার দাবি করে আসছি; এটাই কী আমাদের অপোরাধ?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও এর প্রকৃত সমাধান কী হতে পারে, আমার তা জানা নেই । তবে আমি মনে করি, সরকারের পাশাপাশি আমাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো্কেও পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দায়ভার বহন করতে হবে ।..

পাহাড়ের কোনো সহিংসতা ঘটনার পরে প্রায়ই রাজনৈতিক সমাবেশগুলোতে অনেক বক্তা এরকম বলে থাকেন যে, সরকার নাকি বধির। কিন্তু আমার মতে, অন্যের সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে নিজের গায়েও ময়লা আছে কিনা, তা যাচাই করা যুক্তিযুক্ত। তাই শুধু সরকারকে দোষ দিয়ে কী লাভ? আগে নিজেরা যাচাই করুন সাধারণ জনগণের কাছে আপনাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। আপনারা জনগণের কাছ থেকে যে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন; তা কী নিজেদের ভ্রাতৃীঘাতি সংঘাতে ব্যবহারের জন্য? পাহাড়িদের মধ্যে চাকমারা সংখ্যাগুরু,  তাই তারাই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন বেশি; এ কারণে আমরা চাকমারা দিন দিন অন্য আদিবাসি পাহাড়িদের কাছে অপ্রিয় হচ্ছি।

আমি এতদিন ধরে জানতাম জনসংহতি সমিতি—জেএসএস = জনগণের সমিতি > কিন্তু আসলেই কী তাই? অন্যদিকে পার্বত্যবাসীর অধিকার আদায়ের পথপ্রদর্শক নাকি উইনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট—ইউপিডিএফ = একতাবদ্ধ জনবল > কিন্তু কতটুকু? জেএসএস-এর কাজ দেখলে মনে হয়, তারাই আমাদের স্বায়ত্বশাসন দেবে, সরকার নয় ।

আমার মতে, জেএসএস ও ইউপিডিএফ উভয়েই স্বাভাব-চরিত্রে অনেকটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো। জেএসএস-এর আওয়ামী লীগের মতো এখনো কিছুটা নিজ জাতীর জন্য কিছুটা জাতীয় চেতনা রয়েছে। অন্যদিকে, আমরা পাহাড়িরা নিজেরাই নিজেদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তালগোল পাকাচ্ছি, ভ্রাতৃঘাতি দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছি। …

মনে করি, দুই দিক থেকে মুখোমুখি দুটি মাইক লাগানো হয়েছে। একদিকের মাইকে আমি দাবি আদায়ের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছি, অন্যদিকের মাইকে আর কেউ একই রকম কথা বলছে; মাঝখানে রয়েছে সরকার নামক এক জড়বস্তু । এখন বলুন তো, সরকার পক্ষ কী আমাদের কারো কথা শুনতে পাবে? এ অবস্থায় আমরা কী করে আশা করতে পারি যে, আমাদের অধিকার আদায় হবে?

পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা, তথা জনপ্রিয়তা হারানোর পেছনে কী ভ্রাতৃঘাতি দ্বন্দ্ব দায়ী নয়? সরকার ও বাঙালি সেটেলার কর্তৃক বার বার পাহাড়িদের ওপর আঘাত হানার পরোক্ষ দায় কী তাদেরও নেই? সময়ের দাবি, জনগণের দাবি, শিক্ষিত সমাজের দাবি—একতাবদ্ধতার জন্য আপনারা কতটুকু দাম দিয়েছেন? আপনাদের কাছে তো আমাদের একটাই দাবি, একটাই চাওয়া—তা হচ্ছে একতা। সরকার বধীর বলেই আমরা সাধারণ জনগণ ন্যায় বিচার পাইনা। কিন্তু আপনারাও কী বধীর নন?

এক সময় সাবেক গেরিলা দল শান্তিবাহিনী গঠনকালে ছাত্রাবস্থায় অনেকই নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে জুম্ম (পাহাড়ি) জাতির জন্য কাজ করেছেন। আমার জানতে ইচ্ছে করে, এখন কতোজন তমেন নি:স্বার্থভাবে কাজ করতে উদ্যোগী? একজন মূমূর্ষূ রোগির জন্য এক ফোঁটা রক্তের যেমন মুল্য আছে, তেমনি আমাদের সাধারণ জনগণেরও রয়েছে জীবনের মুল্য । তাই আপনারা পাহাড়ি জাতির জন্যই যদি কাজ করতে চান, তাহলে আগে নিজেরা একতাবদ্ধ হোন!

আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই, না সরকারের, না জেএসএস-এর, না ইউপিডিএফ-এর।  আমাদের জীবন আর যাই হোক, কচু পাতার পানি নয়।…
এসব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও এর প্রকৃত সমাধান কী হতে পারে, আমার তা জানা নেই । তবে আমি মনে করি, সরকারের পাশাপাশি আমাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো্কেও পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দায়ভার বহন করতে হবে ।..

পাহাড়ের কোনো সহিংসতা ঘটনার পরে প্রায়ই রাজনৈতিক সমাবেশগুলোতে অনেক বক্তা এরকম বলে থাকেন যে, সরকার নাকি বধির। কিন্তু আমার মতে, অন্যের সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে নিজের গায়েও ময়লা আছে কিনা, তা যাচাই করা যুক্তিযুক্ত। তাই শুধু সরকারকে দোষ দিয়ে কী লাভ? আগে নিজেরা যাচাই করুন সাধারণ জনগণের কাছে আপনাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। আপনারা জনগণের কাছ থেকে যে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন; তা কী নিজেদের ভ্রাতৃীঘাতি সংঘাতে ব্যবহারের জন্য? পাহাড়িদের মধ্যে চাকমারা সংখ্যাগুরু,  তাই তারাই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন বেশি; এ কারণে আমরা চাকমারা দিন দিন অন্য আদিবাসি পাহাড়িদের কাছে অপ্রিয় হচ্ছি।

আমি এতদিন ধরে জানতাম জনসংহতি সমিতি—জেএসএস = জনগণের সমিতি > কিন্তু আসলেই কী তাই? অন্যদিকে পার্বত্যবাসীর অধিকার আদায়ের পথপ্রদর্শক নাকি উইনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট—ইউপিডিএফ = একতাবদ্ধ জনবল > কিন্তু কতটুকু? জেএসএস-এর কাজ দেখলে মনে হয়, তারাই আমাদের স্বায়ত্বশাসন দেবে, সরকার নয় ।

আমার মতে, জেএসএস ও ইউপিডিএফ উভয়েই স্বাভাব-চরিত্রে অনেকটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো। জেএসএস-এর আওয়ামী লীগের মতো এখনো কিছুটা নিজ জাতীর জন্য কিছুটা জাতীয় চেতনা রয়েছে। অন্যদিকে, আমরা পাহাড়িরা নিজেরাই নিজেদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তালগোল পাকাচ্ছি, ভ্রাতৃঘাতি দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছি। …

মনে করি, দুই দিক থেকে মুখোমুখি দুটি মাইক লাগানো হয়েছে। একদিকের মাইকে আমি দাবি আদায়ের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছি, অন্যদিকের মাইকে আর কেউ একই রকম কথা বলছে; মাঝখানে রয়েছে সরকার নামক এক জড়বস্তু । এখন বলুন তো, সরকার পক্ষ কী আমাদের কারো কথা শুনতে পাবে? এ অবস্থায় আমরা কী করে আশা করতে পারি যে, আমাদের অধিকার আদায় হবে?

পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা, তথা জনপ্রিয়তা হারানোর পেছনে কী ভ্রাতৃঘাতি দ্বন্দ্ব দায়ী নয়? সরকার ও বাঙালি সেটেলার কর্তৃক বার বার পাহাড়িদের ওপর আঘাত হানার পরোক্ষ দায় কী তাদেরও নেই? সময়ের দাবি, জনগণের দাবি, শিক্ষিত সমাজের দাবি—একতাবদ্ধতার জন্য আপনারা কতটুকু দাম দিয়েছেন? আপনাদের কাছে তো আমাদের একটাই দাবি, একটাই চাওয়া—তা হচ্ছে একতা। সরকার বধীর বলেই আমরা সাধারণ জনগণ ন্যায় বিচার পাইনা। কিন্তু আপনারাও কী বধীর নন?

এক সময় সাবেক গেরিলা দল শান্তিবাহিনী গঠনকালে ছাত্রাবস্থায় অনেকই নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে জুম্ম (পাহাড়ি) জাতির জন্য কাজ করেছেন। আমার জানতে ইচ্ছে করে, এখন কতোজন তমেন নি:স্বার্থভাবে কাজ করতে উদ্যোগী? একজন মূমূর্ষূ রোগির জন্য এক ফোঁটা রক্তের যেমন মুল্য আছে, তেমনি আমাদের সাধারণ জনগণেরও রয়েছে জীবনের মুল্য । তাই আপনারা পাহাড়ি জাতির জন্যই যদি কাজ করতে চান, তাহলে আগে নিজেরা একতাবদ্ধ হোন!

আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই, না সরকারের, না জেএসএস-এর, না ইউপিডিএফ-এর।  আমাদের জীবন আর যাই হোক, কচু পাতার পানি নয়।…

Link : http://w4study.com/?p=1693

শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

স্মৃতিচারণা এবং ......

ব্যক্তিগত পরিচয় দিয়েই লেখাটি শুরু করছি । আমি প্রতিভাস চাকমা, বাবা প্রয়াত চন্দ্রশেখর চাকমা, যার অভাব আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি । যতটা না বাবা হিসেবে তার চেয়ে বেশি হয়তো পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে । যাকে আজ কাছে পেলে হয়তো জীবনটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো কিংবা অনেক কিছুর ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, সমাধান এবং পরামর্শ তার থেকে নিতে পারতাম । পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে আমার ভাবনা আমার স্বপ্নটা যদিও ছোটকাল থেকে কিন্তু মন থেকে অনুভব করতে শিখেছি ২০০৯ সালে । যে দিনটিতে তিনি বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন । কে বা কারা কিংবা কারা বা কাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে এই ঘটনাটি ঘটেছিল তা আমার অজানা নয় । সেদিন মনে ছিল ক্ষোভ, দুঃখ, তবে আজ তা শুধুই কষ্টের যতটা না বাবাকে আঘাত করার কারণে তার চেয়ে বেশি জাতির অবক্ষয়তার কারণে । সেটাই যদি শেষ হতো তাও হয়তো নিজেকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুজে পেতাম । কিন্তু যেদিন বাবা মারা গেলেন খাগড়াছড়িতে ( অথচ আমাদের বাড়ি রাঙ্গামাটিতে ) না দেখে যেতে পারলেন পরিবার, না বাড়ি না হাসপাতাল । তারপর !! ১১ই অগাস্ট, ঘটনাটি ভুলে থাকতেই চেষ্টা করি, যিনি দেহ ত্যাগ করেছেন, যিনি কিনা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ইতিহাসের একমাত্র সাধারণ সম্পাদক যিনি তিন তিন বার দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার সাথে তার সহকর্মীরা শেষ দেখা করতে এলে বাধা দেওয়া, হুমকি দেওয়া হলো তারা রাঙ্গামাটি ত্যাগ না করলে দাহ করতে দেওয়া হবে না, আমার বাবাকে !! জানিনা আমি কিভাবে নিজেকে সংযত রেখেছিলাম !! বাবার নামে দেয়ালিকা, বাবা সংস্কারপন্থি, দলত্যাগি,সার্থলোভী আবার অনেকের কাছে একজন সত্যিকার নেতা । আজো জানা হয়ে উঠেনি কারণগুলো । বাবার নামের পাশে দেওয়া প্রলেপগুলো কিংবা বাবাকে নিয়ে করা কটুক্তিগুলো ঠিক বিশ্বাসো করতে পারিনা বা অসমর্থনও করি না । যদি কোনোকালে বড়বাবা ( রূপায়ন দেওয়ান ) আর আজু ( সন্তু লারমা ) এক মঞ্চে জণসমক্ষে যদি মুক্ত বিতর্ক করেন তখন হয়তো জানতে পারবো আসল ঘটনা । তবে আমার কাছে বাবা বাবাই, খারাপ হোন ভাল হোন , এবং অনেকের মাঝে একজন যিনি আমার আদর্শ । আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর অবতারণা এই কারণে যে প্রথমত আজ আমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী এবং দ্বিতীয়ত ভ্রাত্রিঘাতি সংঘাতের কারণে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতি বুঝাতে । সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই, তবে যতটুকু জানি , শান্তিবাহিনীর আমলে সেনাবাহিনীর হাতে যতজন না শহীদ হয়েছেন তার চেয়ে বেশি প্রাণ হারাচ্ছেন ভ্রাত্রিঘাতি সংঘাতে । ভ্রাত্রিঘাতি সংঘাতে কে লাভবান তা আজো জানা হয়নি । পত্রপত্রিকা, ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি ইউ পি ডি এফ বার বার সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে অন্যদিকে জে এস এস ইউ পি ডি এফ কে নিষিদ্ধ করার আন্দোলন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত । ইউ পি ডি এফ কে ধন্যবাদ এই কারণে যে তারা মুখে অন্তত আহ্বান জানিয়েছে জানাচ্ছে, তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী তাদের এই আহ্বান লোক দেখানো বলেই প্রতিয়মান হয় । অন্যদিকে জে এস এস এম এন লারমা যদিও প্রথম থেকে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন, আমার জানামতে তাদের আঘাটে কেউ প্রাণ হারিয়েছেন শুনিনি কিন্তু প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে লারমা বাবুকে দোষারোপ করার মাধ্যমে তারা কতটুকু সফল তা আমি জানি না , হয়তো তারা মনে করেন সৎ সঙ্গে সর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ কিংবা অন্যায় যে করে আর যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী । এই ক্ষুদ্র মস্তিস্কে তা আমার বুঝা হয়ে উঠেনি ।
ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দেয়, ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতার সময় , বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাক্কালে কিংবা চুক্তি কোন সিদ্ধান্তটিতে আমরা এক ছিলাম !! জানি এবং মানি সেগুলো জুম্ম জনগণের মঙ্গলের জন্যই । কিন্তু আদৌ মঙ্গল বয়ে এনেছে কি !! আমার বন্ধুর সেই উক্তিটির সাথে আমি একমত, যে রাজনীতিবিদরা হচ্ছেন মাছ আর জনগণ হচ্ছে পানি । জনগণের সতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো আন্দোলন জয় লাভ করতে পারে না, যেমনটা আদিবাসী ইস্যুতে । আমরা আন্দোলন করছি আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির জন্য, আবার আমাদের মধ্যেও অনেকে আদিবাসী পরিচয় চান না ।
আমার জানা মতে, তাদের সংখ্যাটা এত বেশি না যারা পারিবারিক শিক্ষা পেয়েছিলাম, আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার অধিকার আমার । যদি পেতামই সেই দিদি ( সংগত কারণে নামটি উল্লেখ করলাম না ) চাকমাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখতেন না চাকমারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি, কিংবা আত্মমর্যাদা থাকলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট এ কর্মরত থাকতাম না বা আমাদের কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে লিখতাম না স্থানীয় ও উপজাতিয় পোশাক বিক্রেতা । আজ আমাদের তরুণ প্রজন্ম এবং ধনবানরা রাজনীতি বিমুখ । তাদের মতে রাজনীতি করে কি হবে , হয় নিজে মরবো নয়তো জাতি ভাইকে মারতে হবে , তারচেয়ে চুপচাপ আছি এই ভালো । কিংবা ধনবানরা অতিষ্ঠ , একদলকে চাদা দিলে অন্য দল দাবি করে বসে দ্বিগুণ । তাদের মতে হয়তো এই প্রবাদতায় সত্য, দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল । আমি তাদের মতামতকে শ্রদ্ধা রেখে বলতে চায় নায় মামার চেয়ে কানা মামা ভালো, দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ । বাঘাইহাট, খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, নানিয়াচরের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কি আছে ?? কিংবা জালিয়াপাড়ার সেই ঘটনাটির মতো একদিন আমারও ওভাবে রক্ত ঝরতে পারে, আমার আপন মা বোন সম্ভ্রম হারাতে পারে কোনো সেটেলার বাঙ্গালীর হাতে, নয়কি ?? তবে কেন আমার মাঝে জাগ্রত হবে না জুম্ম জাতীয়তাবাদ, কেন আমি আমার অধিকারের জন্য আন্দোলন করবো না !! কিংবা যারা জুম্মজাতিয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধ হয়ে কাজ করছি তারা কেন ভ্রাত্রিঘাতি সংঘাতকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছি , এম এন লারমা বলেছেন কাউকে প্রাণে মারা যায় কিন্তু হারানো প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া যায় না, সত্যিকার জুম্মজাতিয় সৈনিক কখনো কি ভ্রাত্রিঘাতি সংঘাতের পক্ষে হতে পারে ?? আমি না হয় মূর্খ, নাম করা কোনো প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করছি না বা ভালো কোনো ডিগ্রি আমার নেই, কিন্তু আপনারা তো অনেকেই ভালোভালো প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন, পড়ছেন, শুধু কেন সেখানো বুলি আওড়াবো । আসুন নিজেকে একটু বিস্তৃত করি । সর্বোপরি এত এত বার আহ্বান জানানোর পরও যেহেতু ভ্রাত্রিঘাতি সংঘাত কেউ বন্ধ করছেন না, আসুন সুশীল সমাজের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ নেতৃত্বে আমরা তরুণ সমাজ দলে দলে একই পতাকাতলে একই মত্তে ব্রত হয়ে স্বপ্নের জুম্মলেন্ড গড়ে তুলি । আমার মা বাবা হয়তো আমাকে অধিকার সচেতন করেন নি, আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষকে করি অধিকার সচেতন, বাচিয়ে রাখি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আমরা নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষিত হতে পারিনি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষিত হতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করি ।