পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শিক্ষিত তরুণরাই বদলে দিতে পারে পাহাড়ের ঘৃণ্য রাজনীতি


বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৯০ এর এরশাদ সরকার বিরোধী ছাত্র-গণ অভ্যূত্থানে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। গত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও  আমরা দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অন্যায় সেনা শাসন, সেনাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার মেনে নেয়নি ।
ইতিহাস বলছে, আমাদের পাহাড়ীদের উপর চলমান অন্যায়, নিপীড়ন, অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল লড়াকু ছাত্র সমাজ– প্রথমে  পাহাড়ী ছাত্র সমিতি, আরো পরে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, সংক্ষেপে পিসিপি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তিকে ঘিরে বিভক্ত হয় পিসিপি। শান্তিচুক্তি পক্ষীয় জনসংহতি সমিতি–জেএসএস সমর্থিত পিসিপি এবং শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট– ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি।
এখন পিসিপি’র নিজস্ব ভিত্তি নেই বললেই চলে, কারণ যে নামেই ডাকা হোক না কেন, অথবা পিসিপি যে আঞ্চলিক দলের সঙ্গেই যুক্ত হোক না কেন, সংগঠন হিসেবে  পিসিপি’র দুই অংশই এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তাদের কথা না হয় বাদই দেওয়া যাক। কারণ যারা অসুস্হ্ রাজনীতির চর্চা করছেন, তাদেরকে বলে কোন লাভ নেই, তারা আসলে নিজ নিজ নেতাদের শেখানো বুলি ছাড়া অন্য কোন চেতনা ধারণ করে বলে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় । আমার মনে হয়, তারা জুম্ম (পাহাড়ি) জাতির জন্য কাজ করতে ভুলে গেছে; দলের কাজেই তারা বেশী ব্যস্ত ।
পিসিপি’র বাইরে যারা সাধারণ শিক্ষার্থী, তাদের বলছি,  আপনারা একটু ভেবে দেখুন, শান্তিচুক্তি হওয়ার পর এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেল, যার মূল বিষয়গুলো এখনো অবাস্তবায়িত, পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো স্বাধীন দেশের ভেতর পরাধীন এক জনপদ, সেনাশাসিত অঞ্চল, ভাতৃঘাতি সংঘাতের সাথে সাথে পাহাড়ে চলছে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটেলার বাঙলী কর্তৃক পাহাড়ীদের জমি জবর দখল, অগ্নি সংযোগসহ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যতন-নিপীড়ন। কিছু দিন বিরতির পর আবার এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায়।
এ কথা ধারণা করা কঠিন নয় যে, যতদিন শান্তিচুক্তি পুরোপুরি না বাস্তবায়িত হবে, ততদিন এ সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি  হয়েই চলবে। … কেউ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারেন না যে, একদিন আমার ওপর বা আমার বাবা-মা, ভাই-বোনদের ওপর আবারো হামলা হবে না ।
এ রকম এক দমবদ্ধ করা পার্বত্য পরিস্থিতিতে আমরা কী শুধুই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবো? দেখুন, রাজনৈ্তিক দলগুলোর অনৈ্তিক কাজের জন্যই চাকমারা আজ অন্য জাতিস্বত্ত্বার কাছে অপ্রিয়; তাই বলা যায়, লক্ষ্য আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার আদায় হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের দশ ভাষাভাষী এগারোটি জাতি আজ আমরা বিভক্ত। উপরন্তু রয়েছে আমাদের তিনটি রাজনৈ্তিক দল–জেএসএস (সন্তু), ইউপিডিএফ এবং জেএসএস (রূপায়ন); রয়েছে আওয়ামী লীগ ও  বিএনপি’র সমর্থক পাহাড়ীরা। তাহলে বলুন তো আমরা কয় ভাগে আজ বিভক্ত?
আপনারা কী জানেন, এমনও তথ্য আছে, সরকার কোন ভাল, শিক্ষিত বাঙলি জনগোষ্ঠিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূণর্বাসন করেনি?  তাদের মধ্যে অনেকেই সন্ত্রাসী, পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামিও রয়েছে। এমন কি তারাও প্রতারণার  শিকার, তাদেরকে বলা হয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামে জায়গার অভাব নেই, পাঁচ একর করে জায়গা দেওয়া হবে তাদের। সে প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় তাদের প্রতি মাসে রেশন দেওয়া হয়, অথচ পাহাড়ীরা বৃদ্ধ ভাতা থেকেও বঞ্চিত ।
আরো লক্ষণীয়, সংবাদ মাধ্যমগুলো একতরফা খবর প্রকাশ করার কারণে আদিবাসী জনপদের ওপরেও সরকারের কুনজর পড়েছে। খাগড়াছড়ীতে এক বছরেরও বেশী সময় ধরে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ বন্ধ । ভাবুন কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে এর পিছনে?
অন্যদিকে তিনটি রাজনৈতিক দলের কোন একটিতে যোগ দিলেও স্বজাতির ভাইয়ের হাতেই হয়তো মরতে হবে।
এ অবস্থায় একমাত্র শিক্ষিত তরুণরাই বদলে দিতে পারে আমাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ঘৃণ্য রাজনীতি এবং ধ্বংসের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে । তাই আহ্বান জানাই, সুশীল ছাত্র সমাজ, আসুন, আমাদের রাজনৈ্তিক দলগুলোর অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন না করে আমরা একতাবদ্ধ হই। সরকারের চক্রান্তের হাত থেকে জুম্ম জাতিকে রক্ষা করতে চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জোর আন্দোলন গড়ে তুলি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন